পারফেক্ট পোলাও রান্নার টিপস

দেশে বিদেশে নানারকম নানা স্বাদের পোলাও রেসিপি রয়েছে। যেমন পনির পোলাও,মটর পোলাও,মাশরুম পোলাও,চিকেন পোলাও,সয়া পোলাও,ইয়াখনি পোলাও,ছোলার পোলাও,কাস্মীরী পোলাও,গ্রীন পোলাও,ফিস পোলাও,আলু পোলাও,চিংড়ি পোলাও,এরাবিয়ান পোলাও,কাবুলি পোলাও ইত্যাদি।

তাছাড়া পুজার সময় বা ভোগে কিংবা নিরামিষ ভোজীদের জন্য  বিভিন্ন ধরনের নিরামিষ পোলাও তো আছেই।এসব পোলাও খেতে তো দারুণ মজার,তবে রান্না করা অনেকের কাছেই কিছুটা কঠিন মনে হয়।অনেকের কাছে ঝরঝরে সুসিদ্ধ পোলাও রান্না করাটা অনেকটা যুদ্ধ জয় করার মত বিষয়।কেননা খিচুড়ি নরম খেতে ভালো লাগলেও পোলাও নরম খেতে ভাল লাগেনা,আবার শক্ত হলেও বাজে লাগে।তবে এতকিছু ভেবে চিন্তার কিছু নেই,যাদের কাছে পোলাও রান্না করা কঠিন মনে হয় তাদের জন্য আজ হাজির হয়েছি পারফেক্ট ঝরঝরে পোলাও রান্নার টিপস নিয়ে এবং সেই সাথে পরবর্তীতে থাকবে বিভিন্ন স্বাদের নানারকম পোলাও রেসিপি।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টিপসগুলো।এই টিপসগুলো ফলো করে যে কেউ খুব সুন্দর ঝরঝরে পারফেক্টলি পোলাও রান্না করতে পারবে।

পারফেক্ট সহজ ঝরঝরে সাদা পোলাও রান্নার টিপস [রাইস কুকার, প্রেসার কুকারে রান্নার টিপস সহ]

টিপসঃ

  • বাসমতী চাল ছাড়া অন্য সব পোলাও চালের পোলাও রান্নার আগে চাল ধুয়ে ৩০ মিনিট ছাকনিতে ছড়িয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।এতে পোলাও ঝরঝরে হবে।
  • বাসমতী চাল দিয়ে পোলাও রান্না করলে মিনিমাম আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং আধা ঘন্টা পর ছাকনিতে ছড়িয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
  • পোলাও রান্নায় চালের দ্বিগুণ গরম পানি ব্যবহার করতে হয়।তবে চাল আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রান্না করলে ১ কাপ চালে দের কাপ পানি দিয়েও পারফেক্ট পোলাও রান্না করা যায়।সেক্ষেত্রে চুলার আঁচ একটু ব্যালেন্স করে নিতে হয়।অর্থাৎ গরম পানিতে চাল দেয়ার পর হাই হিটে বলক তুলে আঁচ লো আর মিডিয়ামের মাঝামাঝি রেখে ঢাকনা দিয়ে রান্না করতে হয় পানি আর চাল সমান হওয়া অবধি।হাই হিটে চালের দ্বিগুণ পানি দিয়ে এই কাজ করতে সময় লাগে প্রায় ৩-৪ মিনিট আর লো টু মিডিয়াম এ চালের দের গুন পানি দিয়ে সময় লাগে প্রায় ৭-৮ মিনিট।
  • চাল নতুন হলে পানি একটু কম লাগে,আবার বেশি পুরনো চাল হলে পানি একটু বেশি লাগে।আধা কাপ পানি কম বেশি করলেই পারফেক্ট পোলাও হয়ে যায়।
  • সাদা পোলাও রান্না করতে চাইলে পানির সাথে তরল অথবা গুড়া দুধ ব্যবহার করতে হবে।তরল দুধ দিলে পানির পরিমাণ দুধ সহ মেপে নিতে হবে।সেক্ষেত্রে ১ কাপ চালের জন্য ২ কাপ পানি লাগলে ১ কাপ দুধ ও এক কাপ পানি সহ মোট দুই কাপ দিতে হবে।
  • প্রেসার কুকারে পোলাও করলে চালের দ্বিগুণ পানি থেকে আধা কাপ পানি কম দিতে হবে।অর্থাৎ ১ কাপ চালের জন্য দেড় কাপ পানি দিতে হবে।এবং হাই হিটে দুইটা সিটি দিলে চুলা অফ করতে হবে।
  • রাইস কুকারে পোলাও রান্নার ক্ষেত্রেও পানির মাপ পোলাও চাল এর দ্বিগুণ দিতে হয়।
  • ৮ ইঞ্চি সাইজের গ্যাসের চুলায় বার্নারে একদম ফুল স্পিড এ সর্বোচ্চ ৫ কেজি চালের পোলাও পারফেক্টলি রান্না করা যায়।গ্যাসের চাপ না থাকলে বা আগুন ফুল না আসলে গ্যাসের চুলায় বেশি পোলাও একসাথে রান্না করা যাবেনা,নরম হবে।
  • একসাথে ১ কেজির বেশি চাল রান্না করলে পানির মাপ দুই গুন না দিয়ে দের গুন দিয়ে রান্না করবেন,এতে চুলার আঁচ ও দম ঠিকভাবে ব্যালেন্স করলে পোলাও নরম হওয়ার চান্স কমে যাবে।
  • পারফেক্ট পোলাও রান্না করতে চাইলে অবশ্যই গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।নাহলে পোলাও নরম হবে।দুধ দিলে সেটাও গরম করে দিতে হবে,তাছাড়া দুধ ঠান্ডা অবস্থায় সরাসরি দিলে কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • পোলাও রান্নায় মোটাতল যুক্ত হাড়ি ব্যবহার করতে হয়।যদি মোটা তলযুক্ত হাড়ি না থাকে তাহলে দমে বসানোর সময় হাড়ির নীচে তাওয়া দিয়ে হাই হিটে ৩-৪ মিনিট ও বাকি সময়টুকু লো হিটে দম দিন।তাহলে তলায় লেগে পোলাও নষ্ট হবেনা।
  • দম দেয়ার সময় হাড়ির ঢাকনার ছিদ্র থাকলে তা কোন কিছু দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে এবং দম দেয়ার পুরো সময় টায় ঢাকনা খোলা যাবেনা।
  • ভাল হয় দম দেয়ার সময় হাড়ির উপর কোন পরিষ্কার সাদা কাপড় বা ফয়েল পেপার মুড়িয়ে তার উপর ঢাকনা চাপা দিয়ে দমে দেয়া।এতে বাষ্পীভূত পানি ঢাকনায় আটকে পোলাও এর উপর পরে গিয়ে পানি পানি হবেনা।
  • দমে দেয়ার আগে ১ টেবিল চামচ এর মত লেবুর রস দিতে পারেন,এতে পোলাও গায়ে গায়ে লেগে যাবেনা,ঝরঝরে হবে।এছাড়া পোলাও রান্নায় ১ কেজি চালের জন্য মেজারমেন্ট কাপের এক কাপ (২৫০ এমএল) আধা কেজি চালের জন্য(১২৫ এমএল)তেল/ঘি ব্যবহার করলেও পোলাও ঝরঝরে হয়।
  • পোলাও এ লবণ এর পারফেক্ট মেজারমেন্ট হচ্ছে ১ কেজি চালের জন্য একদম ভরা ১ টেবিল চামচ।তবে সবজি পোলাও বা লবণ টানতে পারে এমন কোন উপকরণ থাকলে সেক্ষেত্রে লবণ একটু আন্দাজ মতো বাড়িয়ে দিতে হবে পোলাও ও অন্যসব উপকরণ এর পরিমাণ বুঝে।
  • এছাড়া পোলাও এ পানি দেয়ার পর পানিতে লবণ চেক করেও দেখে নিতে পারেন লবণ এর মাপ।পানিতে লবন বেশি লাগলে বুঝবেন পোলাও এ লবণ ঠিকঠাক হবে।
  • পোলাও এ চিনি ব্যবহার করলে লবণ দিয়ে চেক করার পর চিনি দেবেন কারন চিনি দেয়ার পর আর লবণ ঠিকঠাক বোঝা যায়না।
  • পোলাও বেশি নাড়াচাড়া করা যাবেনা,এতে চাল ভেঙে যাওয়ার চান্স থাকে।পুরো রান্নায় অর্থাৎ ২-৩ বার আলতো হাতে নেড়ে দেয়াই যথেষ্ট।
  • যারা নারকেল পছন্দ করেন তারা পোলাও চাল ভাজার সময় ফ্রেশ/ফ্রোজেন নারকেল কোড়া ও পানির সাথে নারকেল দুধ ব্যবহার করতে পারেন।এতে সুন্দর একটা নারিকেল এর ফ্লেবার আসবে।পোলাও এ নারকেল এর ফ্লেবার  ইনটেক রাকতে চাইলে কেওরা/গোলাপজল কিংবা কাচামরিচ ব্যবহার করা যাবেনা।
  • শাহী পোলাও রান্নার সময় অবশ্যই শাহী উপকরণ গুলো ব্যবহার করতে হবে।যেমন শাহী জিরা,পোস্ত বাটা,বাদাম,কিসমিস,জাফরান ইত্যাদি।এগুলো বাদ দেয়া যাবেনা।
  • জাফরান,গোলাপজল,কেওরা জল,বাদাম কিসমিস পোলাওয়ে আলাদা স্বাদ নিয়ে আসে,এগুলো হাতের কাছে থাকলে দেবেন,না থাকলে পোলাওয়ের মেইন উপাদান ঠিক রেখে হাতের কাছে যে যে উপকরণ পাবেন সেগুলো দিয়েই রান্না করবেন।
  • যারা কিছুটা মিস্টি স্বাদের পছন্দ করেন তারা পোলাও এর পরিমাণ অনুযায়ী কিছুটা চিনি দিতে পারেন দমে বসানোর আগে।
  • ১ কেজি চালের পোলাও এভারেজ ৬ জন খেতে পারবে দুপুর বেলা।আর রাতে এক কেজি চালের পোলাওয়ে ৮ জন খেতে পারবে।

টিপস তো জানা হলো এরপর ধাপে ধাপে আপনাদের জন্য থাকবে নানারকম নানাস্বাদের দেশি বিদেশি কিছু পোলাও রেসিপি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *