৫টি ভিন্ন স্বাদের ফুলকপি ভর্তা রেসিপি

৫টি ভিন্ন স্বাদের ফুলকপি ভর্তা রেসিপি [Mashed Cauliflower]

শীত মানেই নানা ধরনের সবজির সমাহার আর দামেও বেশ সস্তা।এসব সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি হলো ফুলকপি।এই সবজি অনেকের ই পছন্দের তালিয়ায় শীর্ষ স্থান দখল করে আছে।

ফুলকপি সাধারণত ভাজি,বিভিন্ন তরকারি,ডালের বড়ি ও মাছ দিয়ে ঝোল বা মিক্সড সবজির সাথে খাওয়া হয় বেশির ভাগ সময়।

কিন্তু ফুলকপির ভর্তাও যে অনেক মজাদার হয় তা হয়ত অনেকের কাছেই অজানা।তাই যারা ফুলকপির ভর্তা হয় জানেন না তাদের জন্য আজ ফুলকপির কয়েক স্বাদের ভর্তা রেসিপি শেয়ার করছি।তাছাড়া যারা গতানুগতিক ফুলকপির স্বাদ নিতে নিতে বিরক্ত তারাও ফুলকপির এসব ভর্তা বানিয়ে খেতে পারেন।আশা করি ভাল লাগবে।

ফুলকপি ভর্তা তৈরির সহজ রেসিপি

ফুলকপি ভর্তা তৈরির সহজ রেসিপি

ভর্তা নং ১ঃ

উপকরণঃ

  • ফুলকপি মাঝারি  ১ টি/৫০০ গ্রাম
  • রসুনের কোয়া ৯/১০ টি
  • পেয়াজ কুচি আধা কাপ
  • শুকনো মরিচ ৬/৭ টি বা ঝাল বুঝে
  • সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ/পরিমাণ মত
  • ধনেপাতা কুচি ৩ টেবিল চামচ
  • লবণ স্বাদমতো।

প্রস্তুত প্রণালিঃ

  • ডাঁটা ছাড়া ফুলকপির ফুলগুলো কেটে নিন।
  •  একটি হাঁড়িতে ফুলকপির টুকরো গুলো অল্প লবণ,হলুদ ও পানি মিশিয়ে সেদ্ধ করে পানি শুকিয়ে নিন।
  • এবার প্যানে সামান্য সরিষার তেল গরম করে তাতে রসুনের কোয়া ও শুকনো মরিচ ভেজে নিন।
  • মরিচ ও রসুন কালো পোড়া দাগ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  • এরপর রসুন ও শুকনা মরিচ লবণ দিয়ে ডলে পেঁয়াজ ও ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে আবার ডলে নিন হালকা করে।
  • সবশেষে সেদ্ধ ফুলকপি দিয়ে সবকিছুর সাথে ভাল করে মেখে নিন হাত দিয়ে।
  • গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন দারুন মজার ফুলকপি ভর্তা।

ভর্তা নং ২ঃ

 উপকরণঃ

  • ফুলকপি মাঝারি ১ টি/৫০০ গ্রাম
  • সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ/পরিমাণমত
  • পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ/বড় ২ টি।
  • কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ
  • আদা কুচি কোয়াটার চা চামচ
  • হলুদের গুঁড়া কোয়াটার চা চামচ
  • গোল মরিচের গুঁড়া কোয়াটার চা চামচ
  • আম/জলপাইয়ের আচার ১ টেবিল চামচ
  • ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ
  • লবণ স্বাদমতো।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

  • ফুলকপি ছোট টুকরো করে লবণ দিয়ে মেখে ফুটন্ত গরম পানিতে আধা সিদ্ধ করে নিন।
  • আধা সিদ্ধ ফুলকপিতে হলুদ ও গোল মরিচের গুঁড়ো মেখে সরিষার তেলে হালকা বাদামি রঙ করে ভেজে নিন।
  • একই তেলে পেঁয়াজ কুচি,আদা কুচি ও কাঁচা মরিচ একটু নেড়েচেড়ে হালকা বাদামি করে ভেজে বেটে নিন ।
  • এবার বেটে নেওয়া পেঁয়াজ,আদা ও কাঁচা মরিচের সাথে ভেজে রাখা ফুলকপি হাত দিয়ে চটকে আচার,ধনেপাতা কুচি,সরিষার তেল ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন।
  • গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন দারুন মজার ফুলকপি ভর্তা।

ভর্তা নং ৩ঃ

 উপকরণঃ

  • ফুলকপি মাঝারি সাইজের ১টি
  • যেকোনো ছোট মাছ/গুঁড়া চাঁদা মাছ আধা কাপ বা যেকোনো বড় মাছের একটি বড় টুকরো।
  • কাঁচামরিচ- ৪টি অথবা স্বাদ মতো
  • ধনেপাতা কুচি- ১ টেবিল চামচ
  • পেঁয়াজ কুচি- ২ টেবিল চামচ
  • লবণ- স্বাদ মতো
  • তেল- প্রয়োজন মতো
  • শুকনা মরিচ- ৪/৫টি
  • টক আচারের তেল- ১ চা চামচ
  • সরিষার তেল- ১ চা চামচ
  • হলুদের গুঁড়া- সামান্য।

প্রস্তুত প্রনালীঃ

  • ফুলকপি ভাল করে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিন।
  • চুলায় প্যান বসিয়ে অল্প তেল দিয়ে তাতে ফুলকপি,সামান্য লবন ও হলুদ ও কাচা মরিচ দিয়ে নেড়েচেড়ে সামান্য পানি দিয়ে সেদ্ধ করে ভাজা ভাজা করে নিন পানি শুকিয়ে।
  • ফুলকপি ভাজা হয়ে গেলে তুলে রেখে ওই কড়াইয়েই তেল দিয়ে শুকনো মরিচ ভেজে তুলে রাখুন।
  • এবার ওই তেলেই মাছ দিয়ে সামান্য হলুদ,লবন,দুইটা কাচা মরিচ,একটা পেয়াজ কুচি দিয়ে মাছ সহ ৫/৬ মিনিট ভেজে নিন।
  • এরপর ধনিয়া কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে পাটায় বেটে/ব্লেন্ড করে নিন।
  • (বড় মাছ দিয়ে করলে মাছ আগে তেলে ভেজে নিবেন।এরপর কাটা বেছে কড়াইয়ের তেলে পেয়াজ,মরিচ সামান্য হলুদ দিয়ে  হালকা ভেজে তারপর মাছ দিয়ে ২/৩ মিনিট ভেজে ধনিয়া পাতা দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে নামিয়ে বেটে নেবেন)।
  • এবার শুকনো মরিচ,পেয়াজ ও স্বাদমতো লবণ সহ হাত দিয়ে কচলে নিন এবং আচারের তেল ও সরিষার তেল দিয়ে আবারো মেখে নিন।
  • মাখা হয়ে গেলে বেটে রাখা মাছ ও তুলে রাখা ফুলকপি দিয়ে ভাল করে কচলে নিন হাত দিয়ে।
  • লবন চেক করে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন দারুন স্বাদের মাছ দিয়ে ফুলকপির ভর্তা।

ভর্তা নং ৪ঃ

উপকরণঃ

  • ফুলকপি- ছোট ১টি
  • পিয়াজ কুচি-২/৩টি
  • শুকনো মরিচ- ৪/৫ টি
  • ধনে পাতা- পরিমান মতো
  • লবন-পরিমান মতো
  • সরিষার তেল- পরিমান মতো

প্রস্তুত প্রনালীঃ

  • ফুটন্ত পানিতে ফুলকপি সেদ্ধ করে নিন।
  • তাওয়ায় শুকনো মরিচ টেলে বা ভেজে নিন।
  • এবার মরিচের সাথে লবন,পেয়াজ,ধনেপাতা কুচি ও তেল দিয়ে হাত দিয়ে চটকে  সিদ্ধ করা ফুলকপি দিয়ে মেখে নিন আলু ভর্তার মত।
  •  গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন মজাদার ফুলকপির ভর্তা।

ভর্তা নং ৫ঃ

উপকরণঃ

  • ফুলকপি ছোট সাইজের ১ টি
  • টমেটো টুকরো মাঝারি সাইজের ১ টি
  • পেয়াজ কুচি এক কাপ
  • আস্ত জিড়া ১ চা চামচ
  • কাচা মরিচ কুচি ২ টেবিল চামচ
  • আদা বাটা আধা চা চামচ
  • রসুন বাটা আধা চা চামচ
  • জিরা গুড়ো আধা চা চামচ
  • গরম মসলার গুড়ো আধা চা চামচ
  • হলুদের গুড়া আধা চা চামচ
  • লবন স্বাদমতো
  • সরিষার তেল পরিমাণ মত
  • ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রনালীঃ

  • ফুলকপির ডাটার অংশ ফেলে আস্ত ফুলকপি টি ভাল করে ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে  ফুলকপির চারপাশে রান্নার তেল মাখিয়ে নিন।
  • এবার গ্যাসের চুলায় স্টিলের স্টান বসিয়ে ফুলকপি টি চারপাশে হালকা একটু পুড়িয়ে  নিন।বেশি যেনো পুড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • পোড়া হয়ে গেলে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিয়ে দিন।
  • এরপর একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে আস্ত জিড়া ফোরন দিয়ে কাচা মরিচ দিয়ে সামান্য ভেজে আধা কাপ পেয়াজ কুচি দিয়ে দিন।
  • পেয়াজ নরম হয়ে হালকা ব্রাউন কালার হয়ে আসলে আদা-রসুন বাটা,টমেটো,লবন দিয়ে নেড়েচেড়ে সামান্য পানি দিয়ে সব ভালভাবে কষিয়ে নিন ঢাকনা দিয়ে।
  • মশলা কষাতে কষাতে ফুলকপি ছোট দাড়ের গ্রেটারে গ্রেট করে নিন।ডাটা গুলা নেবেন না।
  • মশলা কষানো হয়ে গেলে এতে হলুদ,জিড়া-গরম মশলার গুড়া দিয়ে নেড়েচেড়ে মিষিয়ে গ্রেট করা ফুলকপি দিয়ে মাঝারি আচে রান্না করুন কিছুক্ষণ যাতে ফুলকপি পুরোপুরি সিদ্ধ হয়ে যায়।
  • ফুলকপি সিদ্ধ হয়ে মাখামাখা হয়ে আসলে বাকি অর্ধেক পেয়াজ কুচি ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন।
  • এরপর গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন ভিন্ন স্বাদের এই ফুলকপির ভর্তা।

ভর্তায় ঝাল লবন একেক জন একেক রকম খেতে পছন্দ করেন।যারা ঝাল লবন কম বা বেশি খান তারা নিজেদের স্বাদমতো লবন মরিচ কম বেশি করে নেবেন।আবার কেউ যদি ধনেপাতার ঘ্রান পছন্দ না করেন তাহলে ধনেপাতা ছাড়া ভর্তা করে নেবেন।তবে ধনেপাতা দিলে স্বাদ ও ঘ্রান অনেকটা বেড়ে যায়।

গরম ভাতের সাথে এই ভর্তা অনেক মজা লাগে খেতে।তবে চাইলে ডায়েটের জন্য ভাত ছাড়াও খালি খালি খেতে পারেন।খালি খেতেও বেশ মজা এই ভর্তাগুলো।

Similar Posts

  • সস রেসিপি

    সস শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ স্যালসুস থেকে যার অর্থ লবন যুক্ত।এটি এক ধরনের তরল বা লেই জাতীয় খাদ্য উপকরণ যা খাবারের সাথে বা অন্য খাদ্যে তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। সস সাধারণত এমনি এমনি খাওয়া হয় না, এটা মুলত অন্য খাবারকে দৃষ্টিমধুর,সুগন্ধ যুক্ত করতে ও আর্দ্রতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমান বিশ্বের রন্ধন প্রণালীতে সস একটি অপরিহার্য…

  • ১০ পদের হেবাং রেসিপি

    পাহাড়ি অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় রান্নার পদ্ধতি হলো হেবাং।চাকমা ভাষায় ‘হেবাং’ অর্থ হচ্ছে ভাপে বা পুড়িয়ে রান্না করা।ট্রেডিশনালি এই ভাপ বা পোড়ানোর কাজ টা করা হয় কলাপাতায় মুড়িয়ে বা বাঁশের ভেতরে দিয়ে।বাঁশের ভেতরে দিয়ে রান্না করলে সেটাকে বলা হয় কেবাং । ফ্রেস আদা,রসুন,মরিচ ও আরো সামান্য কিছু মশলা সব একসাথে মাখিয়ে কলাপাতায় মুড়িয়ে ভাপ বা পোড়ানো…

  • পুলি পিঠার রেসিপি

    শীতকালীন আরেকটি জনপ্রিয় পিঠা হলো পুলিপিঠা।ঐতিহ্যবাহী এই পিঠাটি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয়।কোন কোন অঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলে এটা কুলিপিঠা নামেও পরিচিত। আটা দিয়ে ছোট রুটি বানিয়ে তার মাঝে নারকেল পুর ব্যবহার করে কুলিপিঠে বানানো হয়।তবে অঞ্চল ভেতে পুলিপিঠের বিভিন্ন ধরনের রূপভেদ রয়েছে যেমন ভাজাপুলি,ঝালপুলি,ভাঁপাপুলি,ছ্যাঁকা পুলি,কিমা পুলি,দুধপুলি,রসপুলি ইত্যাদি। পুলি পিঠার ডো চালের গুড়া,ময়দা,আটা,সুজি কিংবা…

  • ১১ ধরনের ঝটপট খিচুড়ি রেসিপি

    মেঘলা আকাশ অথবা চারিদিকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ।এমন দিনে সবার ইচ্ছে করে খিচুড়ির স্বাদ নিতে।অথবা ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে এসে যখন ইচ্ছে করবে না কিছু রান্না করতে,তখন খিচুড়ি একটা স্বস্তির নাম।আর আপনি যদি ব্যাচেলর হন, তাহলে খিচুড়ির গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। যাই হোক,খিচুড়ি কিন্তু আসলে মজাদার ও সহজে হজম হওয়া একটি খাবার।শিশু থেকে বয়স্ক…

  • কুমড়ো ফুলের রেসিপি

    রসনা প্রিয় বাঙালির খাবারের তালিকায় থাকে নানা বৈচিত্র।সেই বৈচিত্রকে আরো বৈচিত্রময় করতে আজ হাজির হয়েছি কুমড়ো ফুলের কিছু জনপ্রিয় রেসিপি নিয়ে।এই কুমড়ো ফুল রান্না করতে সময় যেমন কম লাগে তেমনি খেতেও অনেক মজার হয়। তবে কুমড়ো ফুল সাধারণত বড়া করেই বেশি খাওয়া হয়।কেননা বড়া ছাড়া অন্য রেসিপির জন্য প্রচুর ফুল দরকার হয় যা একদিনে সংগ্রহ…

  • ভাপা পিঠার রেসিপি

    ভাপা পিঠা একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পিঠা বা নাস্তা যা সাধারণত শীতকালে বেশি বানানো বা খাওয়া হয়। এই পিঠাটি বানানো হয় গরম পানির জলীয়বাষ্প এর তাপে এবং এর প্রধান উপকরণ চালের গুঁড়া।পিঠাটি মিষ্টি করার জন্য পিঠার মাঝে ব্যবহার করা হয় গুড় এবং স্বাদ বাড়াতে দেয়া দেয়া হয় নারকেল কোরা।  ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি গ্রামীণ নাস্তা হলেও বর্তমানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *